বাল্যকাল

 


Bright Sky

Part:02

Writer :Shimanto Sarkar

বলা হয়ে থাকে মানুষের জীবনের সব চাইতে সুন্দর কোন মুহূর্ত থাকলে সেটা হচ্ছে তাহার বাল্যকাল। কোন প্রকার দুঃখ বোঝতে পারে না কেউ সে সময়। পরিবার তার ছোট সন্তানকে অভাব সমন্ধে বুঝতেই দেই না। সারাদিন খেলা ধুলা, লাফা লাফি দৌর ঝাপ দিয়ে কাটে এ সময়।

খরের গাদার উপর শুয়ে আছি, চোখের সামনে বিশাল নীল আকাশ। মনে হয়  পুরো দুনিয়া জুড়ে এই আকাশ টা বিশাল একটা ঢাকনা।  চোখ দিয়ে আকাশের শেষ প্রান্ত খুজতে গেলে মনে হয় এই সুবিশাল আকাশটা পাশের গ্রামে গিয়ে ঠেকেছে। মনে হয় হেটে হেটে কিছুদূর গেলে হাত দিয়ে আকাশ টা ধরতে পারবো। যেই ভাবা সেই কাজ, হাটা শুরু করলাম  আকাশ ধরবো বলে, হাটতেই থাকি হাটতেই থাকি গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে যাই মনে হয় এই বুঝি আর একটু সামনে  আকাশ । তবে আকাশের ধরার স্বাদ আর পূরণ হয় না। যখন পেছন ফিরে তাকালাম তখন খেয়াল করি অনেক দূর চলে এসেছি। কোথায় কতদূর এসেছি তাও জানিনা। কখনো নিজের গ্রামের বাইরে একা এভাবে বের হইনি। পথ ভুলে গেলাম না তো?

থ হয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম।কোথায় যাবো কোন দিকে যাবো কিছুই মাথায় আসে না। ফুপরে ফুপরে কেঁদে উঠলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর দেখি বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে আমার পিতামহ আসতেছেন। তাহাকে দেখে ভয়ে পুরো মুখ চুপসে গেলো আমার। উনি খুব রাগি ছোট খাটো ভুলেই মারধর করেন। আজ বুঝি আরো অনেক মার খেতে হবে।

উনি হাসিমাখা মুখে আমার সামনে আসলেন। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন এনু কেন? কার লগে আইছো? আমি চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম একলা আইছি আব্বা। এর পর উনি  আমাকে কাধে তুলে এক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে আরেক হাতে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলেন। আমি উনার মাথার চুল আস্তে করে ধরে রাখলাম। যদিও উনার হাত কখনো আমাকে ছাড়বে না। তবুও পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমি উনার মাথার চুল ধরে রাখলাম।

সেদিন সন্ধ্যায় খড়ের গাদায় সমবয়সিদের নিয়ে লাফা লাফি করতেছি। পাশেই মুরুব্বিরা আটি  জালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। একটু পর আমাদের ঘর থেকে বাসন কোশন পড়ে যাওয়া  আর জগড়ার আওয়াজ আসতে লাগলো। বুঝলাম আমার পিতা আমার মাতাকে মার ধর করতেছেন। মারধর এর কারণ যে আমি তা বুঝতে আমার আর দেরি হলো না।

সকালে বাশের ঝাড় থেকে কঞ্চি কেটে শিপ বানালাম। তাতে মায়ের সেলাই করা সুতোর গুটি থেকে ৫-৬ হাত লম্বা সুতো ছিড়ে বেধে নিলাম কঞ্চির মাথায়। সুতোর অপর পাশে ছোট লোহার পেরেক বেধে বড়শী বানিয়ে নিলাম। আর তাতে লাগিয়ে দিলাম রুটি বানানো আটার গোল আবরণ।

আমারো ইচ্ছা হয় আমিও আমার বড় ভাইদের মতো মাছ ধরে বাসায় আনবো। তারা বিলে গিয়ে সেচ দিয়ে মাছ ধরে বালতি ভরে বাসায় আনে। সবাই কত বাহ বাহ দিয়ে বলে, আইজ তো মেলাডি মাছ দইরে আনছস। তাদের চেহারায় হালকা হাসি মেখে তারা বলে, কই এত মাছ? কত বায়না কান্না কাটি করেছি আমিও তাদের সাথে মাছ ধরতে যাবো। কিন্তু আমাকে কখনো সাথে নেওয়া হয়নি। আমার নাকি খুব অল্প বয়স।

তাই আজ জেদ করছি আজ আমি একাই মাছ ধরতে যাবো। বড় ভাইয়ের মতো মাছ ধরার ছিপ আমার কাছে নেই। নিজের চেষ্টায় জতটুকু পেরেছি তা নিয়েই বাড়ির পেছনের পুকুরে মাছ ধরতে গেলাম।  ময়দার টুপ দেখে একটা মাঝারি টাকি মাছ বার বার  তা খাওয়ার চেষ্টায় আছে। একসময় টুপ ধরে টান দেওয়ায় সুতো ছিঁড়ে গেলো। তখন কি আর বুঝতাম যে সেলাই করা সুতো আর মাছ ধরার সুতো এক হয় না। কঞ্চিটি হাতেই রয়ে গেলো সুতো আর পেরেক টা পানিতে পড়ে গেলো।

আমি পাড় বেয়ে আস্তে আস্তে পুকুরে নামলাম। এ সময় পিচ্ছিল খেয়ে পুকুরের মাঝে চলে গেলাম। সাতার জানি না, ঢক ঢক করে পানি গিলে খেতে শুরু করলাম।

ঘুম ভাংলো, চোখ খুলতেই দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি, আমার চারপাশে আমার পরিবারের মানুষ প্রতিবেশি সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমার পিতা আমার মাতাকে বেধম আবার মারধর শুরু করতে লাগলো। মনে হচ্ছে প্রতিবার নিজের ভুলের জন্য আমার মা মার খাচ্ছে।

ঘুড়ি ওড়ানো, বাশের কঞ্চি দিয়ে বন্দুক বানানো , সুপারি গাছের পাতা দিয়ে টেনে হিচড়ে গাড়ি বানানো  কিংবা মাটি পানিতে গুলিয়ে কাঁদা তৈরি করে পুতুল বানানো আবার সাইকেল এর ট্যায়ার দিয়ে লাঠি পিটিয়ে গাড়ি বানানো এসব করেই বাল্যকাল কাটিয়ে দিলাম।

এখনকার সময় বাচ্চাদের কাটুন ভিডিও গেম সহ নানান বিনোদনের মাধ্যম থাকলেও আমাদের সময় আমাদের খেলানা আমরা নিজেরাই বানাতাম। বিটিভি চ্যানেলে সাদা কালো বাংলা সিনেমা দেখে নিজেরাই পরে সিনেমা সিনেমা খেলতাম। কখনো বা বন্ধুদের মাঝে মুল চরিত্র আমি সাজতাম আবার কখণো বা খল নায়ক সাজতে হতো।

তবে পছন্দের খেলা অবশ্য ছিলো বউ সুয়ামি খেলা। কলা পাতা দিয়ে ঘর বানাতাম , কাজিনদের মাঝে কেউ জংগলের ফুল দিয়ে বউ সাজতো। বিয়ের দাওয়াতি মানুষ কে খাওয়ানোর জন্য জঙ্গলের পাতা ডাল ফুল ছোট অখাদ্য ফল মুল ব্যবহার করতাম। যদিও খেতাম না কেউ, তবুও মুখের সামনে ধরে খাওয়ার ভঙ্গিতে আওয়াজ করতাম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্কুলের দিনগুলি