Time Travel By Train

 


লেখক ঃ- সিমান্ত সরকার


কথায় আছে সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষ তাদের শ্রম আর মেধা খাটিয়ে নদীর স্রোত বাধ বানিয়ে আটকাতে পারলেও সময় কেউ আটকাতে পারেনি।  যদি বলা হয় সময় থেমে যায় কারো জন্য তাহলে তা আজগুপি গল্প ছাড়া কিছুই না। 


সাল ২০১৮ রাত ১২ টা বেজে ২২ মিনিট। ষ্টেশনের প্লাটফ্রমে বসে আছি। এই মাত্র চট্রগ্রাম এর একটি ট্রেইন মিস হয়ে গেল আমার। সকাল অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। এদিকে ষ্টেশন ফাকা হয়ে আসছে। লোক সমাগম কমে যাচ্ছে। প্লাটফ্রমে আমি একা যাত্রী বসে আছি, আর পাশে শুয়ে আছে এক ভিক্ষুক। মুখে ময়লা কাথা মুড়ি দিয়ে নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছে লোকটি। 

ভোর রাত ৫ টার আগে কোন গাড়ি নেই যাওয়ার। থমথমে হয়ে আছে পুরো ষ্টেশন। সারাদিন মানুষের কলহরে থাকা এই যায়গা টা এখন চুপ হয়ে ঘুমের আচ্ছন্নে ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছি, প্যাকেট ফাকা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। অগ্যতা অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নেই এই মুহূর্তে।  ইতোমধ্যে একটি ট্রেইন চলে এলো সামনে। একদম পুরোনো আমলের ট্রেইন। গায়ের রঙ উঠে গেছে। জংকার ধরে গেছে পুরো বগিতে। এই সময় ট্রেন গুলো অনেক উন্নতো হয়ে গেছে। তবে এই ট্রেনের সাথে এই সময়ের সাথে একদম মানান সই না। যদিও বাংলাদেশে মানুষের যাতায়াতের প্রধান এবং প্রথম চাহিদা ট্রেইন সে তুলনায় জনসংখ্যা অনুযায়ী আগের সময়ের ভাংগা ট্রেইন লাইনে নামানো ছাড়া উপায় নেই।  ট্রেনের গায়ে সাদা রঙ দিয়ে লেখা জাহাঙ্গীর নগর টু চাটগাঁও । হাইরে ট্রেনের অবস্থা। আগের সময়কার হয়েছে তো কি হয়েছে। নামের তো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন?? জাহাঙ্গীর নগর ঢাকার আগের নাম ছিলো। আর চট্রগ্রামের নাম ছিলো চাটগাঁও। তাই বলে এখনো এই নাম পরিবর্তন করা হবে না এ কেমন কথা। অগ্যতা মাঝ রাতের এই ট্রেন দেখে মনে হলো এটা ঢাকা টু চট্রগ্রামের লোকাল ট্রেন হবে হয়তো। ষ্টেশনে এভাবে বসে থাকার চাইতে লোকাল ট্রেনেই হেলে ধুলে যাওয়া উত্তম। চড়ে বসলাম ট্রেনে।  এখানে অবাক করা বিষয় টা হলো ট্রেনে শুধু উঠলাম আমি তবে কোন যাত্রী নামতে দেখলাম না।

জানালার ধারের সিটে বসলাম। নোকাল ট্রেইন টিকিট বা সিট নাম্বারের প্রয়োজন হয় না। যে যেখানে পারে সেখানেই বসে পড়ে। ট্রেনের ভেতর কাউকে আর ঘুমাতে দেখলাম না। সবাই জেগে আছে। তবে তাদের পোশাক গুলো অদ্ভুত কেমন জানি ওল্ড ফেশন। মেয়েরা শাড়ি জড়িয়ে আছে ব্লাউজ বিহিন। আর পুরুষগন লংগির মতো ধুতি টাইপের কিছু পড়ে আছে। তবে বেশির ভাগ যাত্রীদের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে হচ্ছে তাদের পোশাক দেখে। ট্রেন তার নিজ গতিতে ছুটতে শুরু করলো। 

জেগে আছে সবাই কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না, আজব ঘটনা ট্রেন এর শব্দ ব্যতিত একজন মানুষ এর শব্দও শোনা যাচ্ছে না। সবাই কেমন জানি চুপচাপ বসে আছে। কি আর করার তাদের সাথে তো আর গল্প করে সময় কাটানোর মন আমার নেই। আমি কানে হেডফোন গুজে দিয়ে গানের তালে তালে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্কুলের দিনগুলি