ভুতুড়ে পকেট

ইদানিং বেশ আর্থিক সংকটে ভুগছি। মা অসুস্থ হওয়ায় বেশ পয়সা খরচ হয়েছে বটে। সামান্য রোজগারে  সাভাবিক জীবন যাপন করতে বেশ কষ্ট হয়। বুজে  উঠতে পারছি না কি করা যায়। ঘাটতি গুলো পূরণ করা বেশ কঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অজ্ঞতা বশত নতুন কাজ ও নিতে পারছি না। রাস্তায় ধারে বেঞ্চিতে বসে সিগারেট  ধরিয়ে লম্বা টান দিলাম। এই ছোট খাটো কাজ করে সংসার চালানো বেশ কঠিন। তার মদ্ধে বিয়ের বয়স ও পার হয়ে যাচ্ছে। ভালো পরিস্থিতির দায়ে, বিয়ে করতেও সাহস পাচ্ছি না। নিজেই তো চলতে পারিনা, এর মাজে নতুন মানুষকে কিভাবে রাখবো। কথাটা ভাবতে ভাবতেই আমার পাশে পড়ে থাকা পত্রিকার দিকে নজর পড়লো। চোখ চলে গেলো চাকরির বিজ্ঞাপনে। একজন পুরুষ রিসিপশনিস্ট প্রয়োজন। মাসিক বেতন ১৮ হাজার। তবে পুরুষ হতে হবে সুদশন। 

আমি  ভাবতে শুরু করলাম আবেদন করবো নাকি? সুদশন পুরুষ প্রয়োজন! আমি কি সুদশন(সুন্দর)?? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন শুরু করে দিলাম। তবে আমার সাথে প্রেম করতে যে বহু মেয়ে আমার পিছু নিয়েছে তা তো বটেই। তবে তাদের যদি কখনো জিজ্ঞেস করেছি আমাকে পছন্দ করো কেন?? উত্তরে তারা বলছে আপনি খুব ভদ্র এবং ভালোমানুষ। কিন্তু কেউ অবশ্য আমার রুপের প্রশংসা করেনি। বন্ধুদের মাজে অবশ্য অনেকে বলেছে আমি নাকি দেখতে সুন্দর। তবে আজ পর্যন্ত কোন নারী আমাকে এ কথা বলেনি। সে যাই হোক, আবেদন করে দেখি। যদি ভাগ্য খুলে যায়! তাহলে একটা বিয়ে করে নেওয়া যাবে। অসুস্থ মা কে ঘরে রেখে কাজে বেড়িয়ে শান্তি পাই না। না জানি কখন কি হয়। তাই উনার খেয়াল রাখার মতো একটা লোকের বিশেষ প্রয়োজন।

ইন্টার ভিউ এর জন্য ভালো পোশাকের প্রয়োজন। বাকি সব ই আছে। তবে প্যান্ট একটা নতুন প্রয়োজন। টানা পোড়ার জীবনে সব দিক থেকেই আমি অভাবগ্রস্থ। একটা ভ্যানে এক লোক কিছু প্যান্ট বিক্রি করছিলো। প্যান্ট গুলো বেশ পুরোনো, লন্ড্রিতে ধুয়ে তা ইস্ত্রি করে বিক্রি করা হচ্ছে। বেশ কিছু প্যান্ট পরখ করে একটা প্যান্টে নজর গেলো। প্যান্টে একটা মাত্র পকেট। অনেক টা পকেট বিহিন টাউজার এর মতো।ঠিক ডান পায়ের দিকে একটা পকেট। দাম মাত্র ১৫০ টাকা । কিনে নিলাম। প্যান্ট টা পড়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। আমার চেহারা নিয়ে প্রসংশা করলেন। তবে পোশাক আশাক মার্জিত না বলে চাকরিটা পেলাম না। আজ কাল মানুষ পোশাক কেই দাম দেয়, কাজ কে না। হতাশ হয়ে বাসায় এলাম। পকেট থেকে চাবি বের করতে গিয়ে হাতে কাগজের ছোয়া পেলাম। কাগজ টি বের করে অবাক হয়ে গেলাম। একি? এতো ১০০০ টাকার নোট। আমার পকেটে তো কোন টাকা ছিলো না। আমি তো ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম হেটে হেটে। কারণ আমার কাছে যাতায়াতের ভাড়াও ছিলো না। মনে হয় জিনি প্যান্টের প্রথম মালিক ছিলো তিনি ভুল করে রেখে দিয়েছিলেন। এখন তো আর উনাকে ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। না জানি কে মালিক। এটা তো আর ম্যানিব্যাগ না যে কোন এক সুত্র ধরে ফেরত দেওয়া যাবে।


পরের দিন আবারো ১০০০ টাকা পেলাম। এবার আমি খুশি হবো না অবাক হবো বুজতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ প্রতিদিন আমার পকেটে ১০০০ টাকার নোট রেখে চলে যাচ্ছে। এভাবে ৩ দিন পাওয়ার পর বুজতে পারলাম এটি একটি জাদুকরি কিংবা ভুতুড়ে পকেট। এভাবে প্রায় ১ বছর হয়ে গেলো। আমি প্রতিদিনি পকেটে ১০০০ করে টাকা পাচ্ছি। বেশ ভালোই কাটছিলো। পরিবারে অবস্থার পরিবতন আসছে। তবে প্যান্ট টাও দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। জতই ধুই পরিস্কার করি। আস্তে আস্তে সুতো গুলো হালকা হয়ে আসছে। আরো একটি আজব ব্যাপার হচ্ছে, প্যান্ট টা খুলে রেখে পকেট হাতালে টাকা পাই না। সেটিকে পরিধান করলে পাওয়া যায়। আর তা দিনে একবারি পাওয়া যাচ্ছে। 

রাতে সুতোয় জুলিয়ে রাখা প্যান্টের দিকে খেয়াল করলে বোজা যায় যে সেখানে মিদু আলো জলছে। হাতে নিয়ে দেখতে গেলে আলো নিভে যায়। এটা আমার কাছে আলাদিনের চেরাগের চাইতে কম কিছু ছিলো না। না জানি কোন ভুতে এই জায়াগায় টাকা রেখে আমাকে খুশি করছে। ঠিক যেমন ছোট বেলায় পড়া রাজ হাসের দেওয়া সোনার ডিমের মত। গরিব লোক সোনার ডিম সব গুলো একদিনেই পাওয়ার লোভে রাজ হাসের পেট কেটে ফেলে। কিন্তু ডিম পায় না। আমার সেই ভুল করা যাবে না। জতই বেশি টাকার লোভে প্যান্ট এর পকেট কাটিনা কেন কোন লাভ নেই। আমি দিনে মাত্র একবারি একটা নোট পাবো তা ভালো ভাবেই জানি। প্রতিদিন এক প্যান্ট পরার ফলে এটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। মা বহুবার বলেছে নতুন প্যান্ট কিনতে। প্রতিবেশিরাও নাকি পেছন থেকে কটু কথা বলে। জাক সেটা কোন ব্যাপার না।


একদিন বাসায় এসে প্যান্ট টা আর খুজে পাই না। মা কে জিজ্ঞেস করায় মা বলে চুলা জালানোর জন্য ঘরে কোন কাগজ ছিলো না। আর ছিলো আমার দরকারি কাগজ। তাই তিনি অজ্ঞতা বশত আমার সেই প্যান্ট টি পুড়িয়ে ফেলেছেন। আমি অভাব হয়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম। মা বললো পুরনো প্যান্ট এত দিন হয়ে গেল পড়ে থাকি। তা নাকি বেশ লজ্জার বিষয়। তবে এভাবে এই ভুতুড়ে পকেট টা হারাবো বলে কখনো ভাবিনি।

মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
Nice story

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্কুলের দিনগুলি